একদিন স্বপ্নের দিন
উঁচু করে বেধে রাখা চুল গুলো নাড়াতে নাড়াতে আর স্বভাবসুলভ চঞ্চলতায় লাফাতে লাফাতে বাসায় ঢুকতে গিয়ে বড়সড়ো একটা ঝটকা খেল সুমন! কে এই তালগাছ?? আর একটু হলে ধাক্কা লেগে যেত।কমন সেন্স নেই বাসার ভিতরে ঢুকেছে,আবার ওয়াশরুমে ও গেছে,যদিও বাইরেরটা,সুমন বিরবির করতে করতে বাসার ভিতরে ঢুকল।
পরিচয়টা দিয়ে দেই,আমি মুনালিসা সুমন। এবার দশম৷ শ্রেণিতে।আজ আমার একমাত্র মামাতো বোন,আমার বড় আপি,শায়লা কে ছেলে পক্ষের দেখতে আসার কথা,আমাদের বাসায়।সম্বন্ধটা আমার আব্বু এনেছে, তার অফিসের পাশের।আমি গিয়েছিলাম আপিকে আনতে।কিন্তু এই উজবুকটা কে?? তাহলে কি ওরা এসে গেছে?? আপিকে নিয়ে আমি আমার রুমে গেলাম।আম্মু,ও সেতো ড্রয়িংরুমে। তার মানে ওরা এসেছে। আপিকে নিয়ে আসতে বলল আম্মু।আমি আপিকে নিয়ে গেলাম, (এ্যা তালগাছ তো এখানে।) মনে মনে
আপিকে দেখতে এসেছে সেই ছেলের ছোট ভাই।তার নাম রাফি। তাকে আমি চিনি।আমাদের বাসায় আগে এসেছে। ভাইয়াকে সালাম দিলাম।তালগাছ পাশে বসে আছে,আড়চোখে আমাকে দেখছে।রাফি ভাইয়া আমাকে বলল, পরিচয় করিয়ে দিই, এই হল আমার এক ছোট ভাই।আমি তাকে সালাম দিলাম,আর বললাম
সুমনঃ আমি সুমন, সামনে এস,এস,সি দেব।আপনি??
শ্রাবণঃআমি শাহরিয়ার শ্রাবণ, (আস্তে বলল।)
সুমনঃ sorry, শুনতে পাই নি, repeat plz..
শ্রাবণঃশাহরিয়ার শ্রাবণ। অনার্স ১ ম বর্ষ।
সুমনঃও শেড়া,,,বন।(দুষ্টুমি করে)।
শ্রাবণঃ (কি বিচ্ছু মেয়ে!) মনে মনে।
সুমন,কি হচ্ছে কি,ওকে জ্বালাচ্ছ কেন? আমার আম্মু চোখ রাঙিয়ে।যাও নাশতা নিয়ে আসো। আপি আমার দিকে অসহায়ভাবে তাকাচ্ছে, আমি অভয় জানিয়ে নাশতা আনতে গেলাম।আপি ভীষণ শান্ত এবং ভীতু।রাফি ভাইয়ার খুব পছন্দ হয়েছে আপিকে তার বড় ভাইয়ের জন্য। আম্মুকে বলল,আন্টি, তাহলে শায়লা আপুর ফোন নাম্বার টা নিয়ে যাই,ভাইকে দেব।আপির সাথে টুকটাক কথা বলল। কথায় কথায় জানা গেল,রাফি ভাইয়া বিবাহিত, প্রেমের বিয়ে,তাই বড় ভাইয়কে রেখেই করেছে,শ্রাবণ হলো রাফি ভাইয়ের শালা বাবু। আমি নাশতা এনে রাখলাম।আপি সবাইকে দিল।চা পর্ব চলছে, শ্রাবণ চা খেতে গিয়ে একটু শব্দ করে ফেলেছে,বেচারা নার্ভাস হয়ে পড়েছে কাজল চোখের শ্যামা মেয়েটির চঞ্চলতায়।সুমন যেন এই ক্ষণের অপেক্ষায় ছিল,আম্মু ওকে বকেছে,ওতো শোধ তুলবেই।
সুমনঃশ্রাবণের দিকে তাকিয়ে,, আস্তে খান,,liquid খাবার এতো শব্দ করে খাওয়ার কিছু নেই।
শ্রাবণের হাত থেকে চা ছিটকে পড়লো ওর শার্টে।
সুমনের সে কি হাসি ☺। সুমনের আম্মু এবার মেয়ের দিকে তাকিয়ে ধমক দিল,"সুমন, মেহমানের সাথে অভদ্রতা করছ তুমি"।
রাফি ভাইয়া এবার পরিস্থিতি সামাল দিতে বলল,আন্টি ও কিছু না,বাচ্চা মানুষ।দুষ্টুমি করেছে।
শ্রাবণ বলল,আন্টি কোন সমস্যা নেই,আমি একটু বেখেয়ালি হয়েছিলাম।
সুমনঃএবার আপিকে নিয়ে যাই?
আম্মুঃ যাও।
(বেচে গেলাম) সুমন মনে মনে।
ওরা আরো কিছুক্ষণ গল্প করে আম্মুর কাছ থেকে ফোন নাম্বার নিয়ে বিদায় নিল।
আমি আর আপি আমার রুমে বসে হাসছি আর বলছি
সুমনঃছেলেটা কি বোকা,আপু দেখছো। শুধু তালগাছের মতো লম্বা,বুদ্ধি হাঁটু তে।
আপিঃ সেই।তুই ওকে ওভাবে বা পচাইলে ও পারতি,বেচারা কি লজ্জাটা পাইছে।
দুইদিন পর..
আম্মুর ফোনে একটা আননোন নাম্বার থেকে মিসড কল।আবার ফোনটা বেজে উঠল,, আম্মু ফোন রিসিভ করতে ই.. আন্টি, আমি শ্রাবণ, ভালো আছেন?? শায়লা আপু আছে?? ওনার সাথে একটু কথা বলতাম।আম্মু ফোনটা নিয়ে আমার রুমে এল।শায়লা আপিকে দিল।
শায়লাঃ কেমন আছো,ভাই??
শ্রাবণঃ ভালো আছি,আপু।আপনাকে আমাদের ভীষণ ভালো লেগেছে।এই নেন শাফিন ভাইয়ের সাথে কথা বলেন।
শায়লাঃ (ভাইটা আবার কে?) মনেমনে।
(এবার বলে নিই,আপির যার সাথে বিয়ের কথা হচ্ছে তার নাম শাফিন চৌধুরী। )
শাফিনঃ কেমন আছেন?
শায়লাঃভালো,আপনি?( এক হাত দিয়ে আমায় ধরে রেখেছে, ভয়ে কাপছে)
আমি আপিকে সাহস দিচ্ছি, আস্তে আস্তে বলছি চালিয়ে যাও।
আপি একটু কথা বলে আমাকে দিল,আমি সালাম দিলাম,ভাইয়ার সাথে কিছুক্ষণ কথা বললাম,ভাইয়া ফোনটা শ্রাবণকে দিল।শ্রাবণ ফোনটা নিয়ে
শ্রাবণঃ কেমন আছো ময়না??
সুমনঃ (ঝটকা খেয়ে নিজেকে সামলে) ভাইয়া কই?
শ্রাবণঃজানপাখি,কেমন আছো? আমার সাথে কথা বলো।
সুমনঃ( আচ্ছা,এই ছেলে কি গাজা খাইছে,কিসব আবোল তাবোল বলছে।সেদিনতো কথাই বের হচ্ছিল না) মনেমনে। কে আপনার জানপাখি??
শ্রাবণঃ ( দাড়াও পিচ্চি,আমাকে বোকা বানানো, এই শ্রাবণ এবার নিজের ফর্মে তোমায় টাইট করবে) মনেমনে। ময়না পাখি,I love you.
সুমনঃ কাঁদোকাঁদো হয়ে,আপি....
শ্রাবনঃজান,ময়না,কাঁদো কেন??
(ডোজটা আজ বেশি হয়ে গেছে)
সুমন রাগ করে ফোনটা কেটে দিল।
শায়লাঃকি চিল্লানি দিলি কেন?
সুমনঃ তুমি জানো,শয়তান ছেলেটা আনায় কিকি বলেছে?
শায়লাঃ কি??
সুমনঃ জান, পরান কিকি হাবিজাবি
শায়লাঃ এতেই আমাদের এত সাহসী সুমন রানী কেঁদে কেটে অস্হির??
সুমনঃ আপি,তুমি বল,যে ছেলে প্রথম কথায় কোন মেয়েকে জান,ময়না বলে সে কি ভালো?? সে তো মহা শয়তান।
শায়লাঃ (হাসতে হাসতে) ঠিক।।
সুমনঃআপি,তুমি কিন্তু মজা করছো।
এভাবে কেটে গেছে বেশ কিছুদিন।মাঝেমাঝেই শ্রাবণ সুমনের আম্মুর ফোনো ফোন দেয়,ভালো ছেলের মতো সুমনের মায়ের কাছে সুমনের পড়ালেখার খোঁজখবর নেয়,আর ফাঁকে সুমনকে পড়ার কথা বলবে বলে সুমনকে ফোন দিতে বলে,সুমনের মা রেহানা খান ও ভালোবুঝে মেয়েকে ফোন দেয়,শ্রাবণ সুযোগ বুঝে সুমোকে ক্ষ্যাপায়,আসলে শ্রাবণ তো তার শ্যামবতীকে ভুলতে পারছে না।নেহাত সুমোটা অনেক ছোট। তাই ওকে রাগিয়ে দিয়ে আহ্লাদী ঝাড়িগুলোই শোনে।যেমন,,আপনি এমন বললে আমি কিন্তু সবাইকে বলে দেব,একদিন তো রাফিকে ফোন দিয়ে সুমন নালিশ ও করেছে, রাফি শ্রাবণকে ফোন দিয়ে বকেছে,সুমোকে কনফারেন্সে রেখে,তবেই সুমোর রাগটা কমেছে।
অনেকদিন হয়ে গেছে,সামনে সুমনের এস,এস,সি পরীক্ষা, পড়াশোনা নিয়ে দারুণ ব্যাস্ত। শ্রাবণকে প্রায় ভুলেই গেছে, শ্রাবণ মাঝেমাঝে ফোন দেয়,সুমো আর ওর সাথে কথা বলে না,এড়িয়ে যায়।ওর আম্মু শ্রাবণকে খুব পছন্দ করে।এমন ভদ্র ছেলে নাকি আর হয় না।
কেটে গেছে দুটি বছর,,,মাঝে ঘটে গেছে অনেক কিছু.। শায়লার বিয়েটা শাফিনের সাথে হয় নি,শাফিনের অন্য জায়গায় রিলেশন ছিল,শায়লার অন্যত্র বিয়ে হয়ে গেছে।রাফিদের সাথে আর তেমন যোগাযোগ নেই।তবে শ্রাবণ এখনো মাঝেমাঝে শায়লাকে ফোন দেয়,সুমনের খবর নেয়।
সুমনের জীবনে ঘটে গেছে দুর্ঘটনা। এস,এস,সির কিছুদিন আগে হঠাৎ রিউম্যাটিক ফিবার ধরা পড়ে,টেনশনে হিস্টিরিয়া হয় কয়েকবার,এ প্লাস মিস হয় অল্পের জন্য। ছোট থেকে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্নটা ভেঙে যায়,সুমন কিছুটা ডিপ্রেশনে চলে যায় স্থানীয় মহিলা কলেজে একাদশ শ্রেনিতে ভর্তি হয়।কেমন যেন চঞ্চলতা কমে গেছে মেয়েটার।ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে এখন।শ্রাবণ অনার্স ৩য় বর্ষে। সুমোর সব খবর ই রাখে।অনেকবার চেষ্টা করেছে নতুন নতুন নাম্বার দিয়ে সুমনদের ফোনে, সুমন কথা বলে নি।শায়লা এসেছে সুমনদের বাড়ি,সুমন অনেক খুশি আজ,আপির সাথে ঘুমাবে।হঠাৎ শায়লার ফোনে ফোন এল,শ্রাবণ ফোন দিয়েছে।
শ্রাবণঃআপু কেমন আছেন? সুমন এখন কেমন আছে?
শায়লাঃ এইতো আছি ভাই,আমি সুমনদের বাসায় এসেছি। সুমন আছে ভালো।
আমাকে নিয়ে কথা হচ্ছে। কে?? আপিকে ইশারায় জিজ্ঞেস করলাম।
শ্রাবণঃ আপু,কিছু মনে না করলে সুমনকে একটু দেবেন,আপনার কথা তো ও শোনে।
শায়লা সুমনকে ফোনটা দিয়ে কথা বলতে বলল।
অনুরোধ করল।সুমন রাগি মুখ করে ফোনটা নিল।
সুমনঃ বলেন তাড়াতাড়ি, আমার সময় নেই ঘুমাবো।
(শ্রাবণ ঈদের মতো খুশি লাগছে,কতোদিন পিচ্চিটার কথা শুনি নি।)
শ্রাবণঃকেমন আছো,পিচ্চি? অনেক বড় হয়ে গেছ তো।
সুমনঃ হু,আমি পিচ্চি নই,মোটেও আমাকে ওটা বলবেন না,কয়দিন পরে আমি এইচ,এস,সি দেব।
এভাবে কিছুসময় টুকটাক কথা বলে কেটে দিল।আগের মতো অতোটা খারাপ মনে হয় নি ছেলেটাকে।ফোন কাটার পর আপি বলল,জানিস শ্রাবণ প্রায় ই আমাকে ফোন দেয়,আর তোর কথা জিজ্ঞেস করে,তোর অসুস্থতার সময় ও অনেক দুশ্চিন্তা করেছে ছেলেটা,ছেলেটা অনেক ভালো,তুই তো একটু কথা বলতে পারিস।
সুমনের আজ হঠাৎ শ্রাবণের কথা ভাবতে ভালো লাগছে।আমার কথা এখনো মনে রেখেছে,আমার জন্য দুশ্চিন্তা করেছে, কেন??
আপির ফোন থেকে শ্রাবণের নাম্বারটা নিয়ে বেলকনিতে গিয়ে একটা ফোন দিল।আজ সুমন কি করছে বুঝতে পারছে না।
শ্রাবণঃ হ্যালো, কে বলছেন?
সুমনঃ আমি সুমন।
শ্রাবণ চমকে উঠল।সত্যি কি সুমো তাকে ফোন দিয়েছে।
শ্রাবণঃ সুমো.. কেমন আছো তুমি??
শ্রাবণের সুমো... ডাকটা শুনে সুমনের কেন জানি অন্যরকম একটা ভালোলাগা কাজ করছে। তবুও নিজেকে সামলে বলল,"আপনার কাছে একটা কথা জানার ছিল,আপনি কেন আমার কথা জানতে আপিকে ফোন দেন?? এখনো আমায় কেন মনে রেখেছেন? " শ্রাবণ বলল,এত প্রশ্ন একসাথে করলে হয়?? শোন,আমি তোমায় মনে রাখবো কি তুমি তো আমার মনেই সারাক্ষণ আছো।সুমো.. আমি তোমার সেই দুবছর আগের চঞ্চলতাটা দেখতে চাই,তুমি জানো তোমার অসুস্থতা আমায় কতোটা কষ্ট দিয়েছে, অই সময়টাতে আমি কতোরাত ঘুমাতে পারি নি,শায়লা আপির কাছে বারবার ফোন করেছি।
সুমন শ্রাবণের কথা শুনে অবাক হচ্ছে আাবার ভালো লাগছে এটা ভেবে,বাবা মা,আত্মীয়দের বাইরে ও কেউ ওকে নিয়ে ভাবে।
শ্রাবণ আবারো বলতে শুরু করল,জানো সুমো.. তোমার অই কাজল চোখের মায়ায় আমি বারবার হারিয়ে ফেলি নিজেকে।
সুৃমন এই কথার কি উত্তর দেবে ওর ছোট মাথায় আসছে না।
সুমন শ্রাবণের কথা গুলো ভাবছে,ওর একমাত্র বেস্টি যে ওকে সারাক্ষণ আনন্দে রাখার চেষ্টা করে সে হল লোপা।সুমন লোপাকে গিয়ে বলল কাল রাতের ঘটনা।লোপা সুমনকে বোঝাল, দেখ সুমো শ্রাবণ ভাইয়া আসলে তোকে অনেক ভালোবাসে,তুই তার সাথে কথা বল,তুই ঠকবি না।
আসলে ও সুমনকে ঠকতে হয় নি।
শ্রাবণ সুৃমনকে নতুন করে স্বপ্ন দেখিয়েছে,মানুষের অসুস্থতা থাকবে,তাই বলে জীবন থেমে থাকবে না, ডাক্তার না হতে পারলে কারো স্বপ্ন শেষ হয় না,সুমন এখন আবার আগের মতো দুরন্ত, তার পাশে যে ভালোবেসো আগলে রাখার সেই মানুষ টি আছে।হোঁচট খেলে যে হাত ধরে আবার টেনে তুলতে পারে।
নটে গাছটি মুড়োলো আমার গপ্প ফুরোলো 😄😄😄
Writer.... of the story ankhi9151।
ছোট্ট ছোট্ট এসব অনুভূতির গল্পগুলো ভালো লাগলে ভোট আর কমেন্ট করার অনুরোধ রইলো সকল পাঠককে 😊
Bạn đang đọc truyện trên: Truyen247.Pro