◇. এক .◇
"তো আপনি বলতে চান যে রাতের বেলা আপনার ছেলে দুইটি হয়ে যায়?" ভ্রূ কুঁচকে জিজ্ঞাসা করলো মাকসুদ।
"হ্যাঁ .....না, মানে ...ইয়ে...ঐ দু'জনের মধ্যে একটা আমার ছেলে আরেকটা অন্য কেউ " আমতা আমতা করে বললো আব্দুল মোক্তার ।
"কবে থেকে এটা শুরু হয়?"
" ঠিক একমাস আগে । যখন থেকে আমার ছেলেকে ঘুম পাড়াচ্ছি "
মাকসুদ আবার তার সামনে বসে থাকা ব্যক্তিটির দিকে তাকালো। চোখে তার অবিশ্বাসের আভা। "ভাই, আপনি বললেন যে আপনি একজন শিক্ষক । তাই না?"
"জ্বি।"
"কোন বিষয় পড়ান?"
"জ্বি ,ফিজিক্স।"
"তো আমি কি ধরতে পারি আপনি ফিজিক্সে এম.এস.সি. করেছেন?"
"জ্বি।"
"আপনি তো যথেষ্ট শিক্ষিত । তাহলে আপনি কিভাবে বলেন যে আপনি ভূত দেখেছেন?"
"আসলে ..ঠিক তা না....আমি ঠিক বুঝতে পারছি না আমার কি হয়েছে ।"
মাঝবয়সী লোক আব্দুল মোক্তার ।নাকের ডগায় ভারী ফ্রেমের নীল চশমা । চোখের নিচে কালি যা প্রমাণ করছে যে সে অনেকদিন ধরে ঠিকমতো ঘুমায় নি। আজকাল যে এই লোকটার উপর দিয়ে খুব ধকল যাচ্ছে তা বোঝাই যাচ্ছে ।
"আপনার স্ত্রীর সাথে কি কোন বিষয় নিয়ে ঝগড়া হয়েছে?" মাকসুদ হঠ্যাৎ প্রশ্ন করলো ।
আব্দুল মোক্তার কিছুটা বিস্মিত হলো,"আ-আপনি কিভাবে জানলেন?"
"পদার্থের এক অতি ব্যস্ত শিক্ষক রাতের বেলা ছেলেকে ঘুম পাড়াচ্ছে এটা একটু খটকার বিষয় । কেননা, আপনার মতো মানুষের কাছে সারাদিন স্টুডেন্ট আসে। তো ঝগড়াটা কি একমাস আগে থেকে?" মুচকি হেসে উত্তর দিল সে।
"আজ বাসায় গিয়ে স্ত্রীর সাথে বোঝাপড়া করে ফেলেন । দেখবেন ঠিক হয়ে যাবে।"
এই বলে রোগীকে বিদায় করলো সে।
সাইকলজিস্ট হিসেবে মাকসুদের কাছে অনেকেই আসে। তবে আজকের বিষয়টা ঠাট্টা ছাড়া কিছুই ছিল না।
আব্দুল মোক্তার ।বয়স একচল্লিশ ।এফ.কে. হাই স্কুলের পদার্থের শিক্ষক ।কিছুদিন আগে স্ত্রীর সাথে ঝগড়া হয় ।তখন ঠিক করলেন নিজের ছয় বছরের ছেলের দেখাশোনা নিজেই করবে । একমাস ধরে রাতে ছেলেকে ঘুম পাড়ানোর সময় প্রায়ই দেখে ছেলে আশেপাশে ঘুরছে। অথচ তার ছেলে তো তার কোলেই ঘুমিয়ে আছে ।মাথা খারাপের অবস্থা দেখে সাইকলজিস্টের কাছে যান। আর সে হলো মাকসুদুর রহিম ।
মাকসুদের চোখে মুখে এক নির্মম রুক্ষ হাসি ফুটে উঠে। নতুন একজনকে পাওয়া গিয়েছে ।
সে জানালার কাছে দাঁড়িয়ে আব্দুল মোক্তারের চলে যাওয়া দেখে। হঠাৎ শীতল থাই গ্লাসে ছুয়ে অপ্রকৃতিস্থের মতো হাসতে থাকে।
Bạn đang đọc truyện trên: Truyen247.Pro