Chào các bạn! Vì nhiều lý do từ nay Truyen2U chính thức đổi tên là Truyen247.Pro. Mong các bạn tiếp tục ủng hộ truy cập tên miền mới này nhé! Mãi yêu... ♥

স্মৃতিমেদুর

বিকালে ঘুম ভাঙতে, ইমন চোখ মুছে উঠে দেখে, ও বসে আছে ওর স্টাডির জানলার কাছের আরামকেদারাটায়। দুপুরবেলা লাঞ্চের পর এখানে বসেই বই পড়তে পড়তে তন্দ্রা এসে গিয়েছিল ওর। সামনেই পুজো... বেশ কয়েকটা পত্রিকার পুজো সংখ্যার জন্য সম্পাদকদের অফিসে গল্প-উপন্যাসের পান্ডুলিপি ওর জমা দেওয়া হয়ে গেছে সময়ের আগেই। ইমন এখন বেশ ঝাড়া হাত পা।

পিয়াস ক'টা দিনের জন্য স্টুডিওর কাজ মিটিয়ে, বেহালায় ওর মায়ের কাছে গেছে। ওদের এই অ্যাপার্টমেন্টটায় ইমন আপাতত একা।

ওরা দুজনেই বেশিরভাগ সময় কাজে ব্যস্ত থাকলেও, একে অপরের ওই চরম ব্যস্ত উপস্থিতিটাও ওদের কাছে একটা অভ্যাস এর মতো। সারাদিন লেখালেখিতে ডুবে থাকলেও, দিনের শেষে পিয়াসের গায়ের স্যান্ডেলউড বডিওয়াশের গন্ধটা না পেলে, মনের মধ্যে কিসের যেন একটা অভাব বোধ হয় ইমনের। আবার, স্টুডিও থেকে ফেরার পর স্টাডি থেকে ইমনের স্বভাবগত লিখতে লিখতে গুনগুন করে গান গাওয়ার শব্দটা কানে না এলে, ঘরটাকে যেন অসম্পূর্ণ মনে হয় পিয়াসের।

তাই যথারীতি ইমনের এখন এই আটতলার ফ্ল্যাটটায় থাকতে একদম ভালো লাগছে না। তার ওপর আবার নিজেকে ব্যস্ত রাখার মতো এখন হাতে তেমন কোনো কাজও নেই। পিয়াসকে ফোন করতে পারে যদিও... কিন্তু, পিয়াস ওর মায়ের কাছে গেলে, ওকে আর ফোন করে বিরক্ত করতে ভালো লাগেনা ইমনের। সেই ছোটোবেলা থেকে পরিবার বলতে ইমনের নিজের ওই দায়সারা মামারবাড়ি ছাড়া আর কিছুই না থাকায়, মায়ের সঙ্গে সময় কাটানোর মর্মটা খুব ভালো করেই বোঝে ইমন। তাই পিয়াসের এই সময়টায় আর ভাগ বসাতে চায় না ও।

কি একটা মনে হতে, তাড়াহুড়ো করে টেবিলে থাকা ল্যাপটপটা খুলে বসে ও। খোলে পুরোনো ছবির একটা ফোল্ডার। স্ক্রিনে একের পর এক ফুটে উঠতে থাকে, ওর আর পিয়াসের পুরোনো ছবিগুলো। এগুলোর মধ্যে কোনোটা হাই স্কুলে পড়ার সময়কার। আবার, কোনোটা নিজেদের আলাদা আলাদা কলেজের ক্লাস বাঙ্ক করে বিবেকানন্দ পার্কের কাছে দেখা করার সময়ের। কোনোটাতে ওরা দুজন স্কুল উনিফর্ম পড়ে কাঠি আইসক্রিম খাচ্ছে। কোনোটাতে পিয়াস ইমনের বাই-সাইকেলের ক্যারিয়ারে বসে আছে। কোনোটা আবার দু'জনে কোনো এক পাইস হোটেলে খেতে গিয়ে তোলা।

সব স্মৃতিগুলো ধুলো ঝেড়ে স্পষ্ট হয়ে যেন বায়োস্কোপের রিলের মতো ঘুরতে থাকে ইমনের মনের খুব কাছাকাছি। এত বছরে ওদের অভ্যেস-স্বভাব-প্রেম-ভালোবাসা সমস্তটাই একে অপরের গণ্ডি পেরিয়ে মিলে মিশে গিয়েছে। নিজের অজান্তেই ওর চোখের কোণ থেকে গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ে কয়েক ফোঁটা শিশির বিন্দু। ওর মনে পড়ে, ঠিক কতটা পথ আর কতগুলো বাধা-বিপত্তি একসাথে পেরিয়ে এসেছে ওরা। দুটো সমকামী ছেলের প্রেম, এই সমাজ কবেই বা সহজে মেনে নিয়েছে ?

কলিং বেলের শব্দে সম্বিৎ ফেরে ইমনের। উঠে গিয়ে দরজা খুলতেই ওর চোখ পড়ে দুটো বড্ড প্রিয় চোখে... পিয়াসের চোখে। ইমনের ঠোঁটে এসে লাগে একটা আলতো চুম্বন। তারপর ও অবাক হয়ে চেয়ে থাকে পিয়াসের দিকে।

"কিরে, এই যে সাত-তাড়াতাড়ি চলে এলাম, সারপ্রাইজটা কেমন লাগলো বল?" একগাল হেসে প্রশ্ন করে পিয়াস।

"আর কটা দিন থেকে আসতে পারতিস তো কাকিমার কাছে..." কাঁপা কাঁপা গলায় বলে ইমন।

"আরে বাবা তোর ওই কাকিমাই 'ছেলেটা ফ্ল্যাটে একা আছে,' বলে আমাকে ঠেলেঠুলে পাঠিয়ে দিল... মায়ের ছেলেটা যে কে, তুই না আমি? সেটাই মাঝে মাঝে বুঝতে পারি না..." পিয়াসের কথা শেষ হওয়ার আগেই ওকে জাপটে ধরে ইমন, বাচ্ছা ছেলের মতো ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে।

ইমনের এই মতিগতি পিয়াসের ভীষণ চেনা, মনখারাপের মেঘ জমে উঠলে মাঝে মাঝেই ওর চোখ বেয়ে এমন বৃষ্টি নেমে আসে।

ইমনকে সামনে এনে আদুরে গলায় পিয়াস প্রশ্ন করে, "কিরে, খুব মন খারাপ করছিল আমার জন্য ?"

চোখ মুছতে মুছতে বাচ্ছাদের মত দু'পাশে জোরে জোরে মাথা নেড়ে ইমন বলে, "কই না তো... আমি তো শুধু ওই স্যান্ডেলউড বডিওয়াশের গন্ধটা মিস করছিলাম..."

হেসে ইমনকে কাছে টেনে নিয়ে, ওর কপালে আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে পিয়াস কানে কানে ফিসফিসিয়ে বলে, "ঘরে চলতো এবার... আর এই গন্ধটা মিস করতে হবে না..."

©️ ঈপ্সিতা মিত্র পুপু

**এই গল্পে ব্যবহৃত সমস্ত ছবিগুলি Pinterest থেকে সংগৃহীত**

Bạn đang đọc truyện trên: Truyen247.Pro