পাঠ-৬ 'আইদ্যাখ ফরিদস্টটল'
মারুফ কমলাপুর ওভার ব্রীজের উপর পা ছড়িয়ে বসে আছে। তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে ফরিদ। রাস্তা থেকে কুড়িয়ে নেয়া এক টুকরা কুষারের রস কিছুক্ষন চাবিয়ে চুবিয়ে থুথু করে ফেলে দিলো।
_ "দূররর!! কোন হালারপুতে কুইষ্যার খাইছে, শালার এক ফোঁটা রসও রাখে নাই।"
মারুফ সোজা হয়ে বসে,
_ " কি কস ব্যাডা? এক ফোঁটাও নাই? দে দেখি, আমি দুইটা চোষা দেই?"
_" আরে ধুর কি চোষা দিবেন, ব্যাডায় খাইয়া , চুইষ্যা চাবড়া বানায় রাইখ্যা দিছে, থুপ পর্যন্ত লাগান নাই। এমন খচ্চরের খচ্চর!"
_" আরে আর কয়েকটা টুকরা খোঁজ, কোনডায়
কিছু না কিছু লাগা থাকবো। হাল ছাড়বি কেন? তুই একটা আশা করছোস, পূরণ তো হওয়া দরকার। নইলে আমারে দে, আমি চুষি দিই, আমার থেকে কিছু না কিছু রসকস পাবি তুই!"
_" আপনে দেহি মসকরা করতেছেন, হেহে। খিদা লাগলে মানুষ মাটিও খায় বড় বাই।"
_" ওররে! বিরাট ফিলোসফির কথা বলি ফেলছোস তো! আমাদের নিউ দার্শনিক 'আইজ্যাক নিউটনের' বড় ভাই 'আইদ্যাখ ফরিদস্টটল'। আচ্ছা তুই তো একলা থাকোস! তোর ভাই বোন ছিলো একটাও?"
ফরিদ মাথার পিছনে দুই হাতে ব্রীজের লোহার বার ধরে উপরের দিকে তাকালো,
_"ছুডু একটা বোন আছিলো। ছোট একটা বাঘ ওয়ালা প্যান্ট পইরা খালি গায়ে টুই টুই কইরা দৌড়াইতো। দেখতে একদম ফুটফুইট্যা রাণীর মতন আছিল।"
_ "কোন রাণী বলতো? বৃটেনের রাণী এলিজাবেথ?"
_ " এলি বেলী না। এক্কেরে সত্যিকারের রাণীর মত
সোন্দর আছিল আমার বইন।"
_ " আমি কি তোরে মিথ্যাকারে রাণীর কথা কইলাম রে বোকা*দা? আর সত্যিকারের রাণীগুলা সব তো সুন্দরও না। পটকা মাছের মত ভোটকা। তারপরে কি হইলো তোর বোনের? কলেরায় মইরা গেছে? "
ফরিদ চোখ বড় বড় করে তাকালো,
_ " এডি কি কন? কলেরায় মরবো কেন? "
_ " না মানে, গরীব মাইনসের স্টোরি তো, দুই চাইরটা না মরলে কাহিনীতে টেস্ট থাকেনা। তাই একটু প্রেডিকশন দিলাম। "
ফরিদ অদ্ভুত চোখে মারুফের দিকে তাকালো,
_ "আপনে খুব খারাপ লোক। আপনের খানায় থু দেই। আর জীবনেও আমার জন্য খানা আনবেন না।"
ফরিদ হনহন করে হেটে চলে গেলো। একবারো পিছনে ঘুরে তাকালো না। ছোটো মানুষ, কি না কি বুঝে আঘাত পেলো, এতো অভিমানি ছেলে... পথে পথে শুধু লাথি গুতা খেয়ে বড় হবে, আহা!!!
মারুফ পিছনের দিকে আরেকটু এলিয়ে আকাশের দিকে তাকালো।
আজ কি পূর্নিমা? পুরো আকাশে যেন কেবল চাঁদের আলোর আধিপত্য। সেই আলোর সাথে টেক্কা দিয়ে তারাদের আলোক রাশিমালা ম্লান হয়ে যায়। আর চাঁদের আলোয় পড়া মানুষের ছায়াগুলো দিনের আলোতে পড়া ছায়ার মত সুস্থির নয়।
চাঁদের আলোর ছায়া অনেক বেশি চঞ্চল, অনেক বেশি গাড়, কিন্তু অনুভূতির দিক দিয়ে কোমল। রাতের ছায়ার মাঝে সুন্দর আবার অশরীরী একটা ভাব থাকে। মনে হয়, ছায়ার মাঝে কিছু একটা লুকিয়ে আছে।
কিছু থাকুক বা না থাকুক, প্রকৃতিরও একটা ভাষা আছে। মানুষ যখন প্রকৃতির ভাষা বুঝতে পারে, তখন সে প্রকৃতির প্রতিটা রেণুর সাথে কথা বলতে পার, প্রতি কণা বাতাসের কথার প্রতিত্তুর করতে পারে, প্রতিটি ঘাস ফড়িং, গুবরে পোকা কিংবা প্রজাপতি, সবার সাথে সখ্যতা গড়তে পারে ।
যে প্রকৃতির মাঝে হিংস্রতা নেই, ঘৃণা নেই, মিথ্যাচার নেই। সে প্রকৃতির বন্ধুত্ব যেদিন গ্রহণ করতে পারে সেদিন মানব জাতির সাথে যোগাযোগ শেষ হয়ে যায়। ধীরে ধীরে সেও প্রকৃতির মত হয়ে যেতে থাকে, মানুষের কথা আর ভালো লাগেনা, তাদের কথা ভালো করে কিছু বুঝতে পার না। তাকে পাগল বলে লোকে গালাগাল দেয়।
কোনো পাগল কি কখনো না খেয়ে মরেছে? না মরে নি! প্রকৃতি তাকে কখনো অভুক্ত রাখে না। তবে খাবারের দুঃশ্চিন্তা নামক বাহুল্য থেকে চিরতরে মুক্তি দিয়েছে। মানুষ হবার শত দায়িত্ব কর্তব্য, সবই বাহুল্য, সব থেকে তার মুক্তি।
মারুফও মাঝে মাঝে ঈর্ষা নিয়ে রাস্তার পাগলদের দিকে তাকিয়ে থাকে। সেও যদি কোনোদিন পাগল হতে পারতো? সেও যদি কোনোদিন এমন সকল বাহুল্য ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিয়ে এই শহরের বুকে হারিয়ে যেতে পারতো? তার গল্পটা পৃথিবীর ইতিহাসে সেখানেই শেষ হয়ে যেত। পাগলদের কোনো ইতিহাস থাকেন। যা থাকে তা পাগল হওয়ার আগ পর্যন্তের গল্প। তবে প্রকৃতি নিয়ে শুরু হয় তার নতুন জীবন। সে এক নতুন গল্প। সে গল্প লেখা অন্য কোনো এক ভাষায়।
এই আকাশটা যে যুগ যুগ ধরে সেরকম কত কোটি গল্পের সাক্ষী, তার কোনো ইয়ত্তা নেই। কত সভ্যতার উৎপত্তি আর ধ্বংসের ইতিহাস বহনকারী তার সবটুকু যদি কখনো জানা যেত!!!
-----------****----------*****-------*****------------
_ "ভাইয়া তুই এতোক্ষণে আসলি? গ্রাম থেকে এক মেহমান আসছে বাসায়। মহা যন্তণা করছে। দুঃসম্পর্কের কোনো আত্মীয় হবে হয়তো। এসেই বকর বকর লাগাইছে। সহ্য হচ্ছেনা আমার, দিন রাত জ্ঞান দিচ্ছে। ড্রয়িং রুমে গিয়ে অবস্থা দেখ..."
_ " দূর সম্পর্কের মানে... কতদূরের? বেশি দূর? কই থাকে? বৃটেন থাকে? বৃটেনের রাণী এলিজাবেথের ভগ্নী টগ্নী টাইপ কিছু ?"
_"ভাই তোর চিপ জোকস বাদ দে... একটারে নিয়া বাঁচিনা, প্যারায় আছি। আরেকজন আবার বৃটেন মারায়।
ড্রয়িং রুমে বসে আছে, যা দেখ গিয়ে"...
মারুফ ঠোঁট সূচালো করে ভিলেন মার্কা হাসি দিয়ে ড্রইং রুমে হাটা দিলো..
next page>>>>>.
(:
Bạn đang đọc truyện trên: Truyen247.Pro