পার্ট ০
অামার ছোট মেয়ে প্রমা"র টুকটাক বিয়ের কথা চলছে।তপুর চাকরি হচ্ছেনা।অামি প্রচন্ড অর্থকষ্টে জর্জরিত।সীমাকে বড়ঘরে বিয়ে দিতে গিয়ে সর্বশান্ত।
নীলুর চিকিৎসা করাতে পারছি না ঠিকমত।অবস্থা এমন যে, এক কাপ চায়ের খরচও বাড়তি করা অসম্ভব!
কঠিন দুঃসময়!!
এসময়, বিখ্যাত এক ফটোগ্রাফার অামার সাথে দেখা করতে এলেন।
যাকে বলে "মরার উপর খাড়ার ঘা"! ফটোগ্রাফারের
নাম : দিলমা চৌধুরী।জন্মসূত্রে অামেরিকান।তাঁর পরিবার বিশুদ্ধ বাঙ্গালী।ইউ.এস.এ তেই থাকেন।
ডিসি সাহেবের
স্পেশাল প্রটেকশন নিয়ে এলেন, নিউজ রিপোর্টাররা অামার বাড়ি ঘেরাও করে ফেললো।
অামি সামান্য মানুষ!এত বড় অতিথি কোথায় বসতে দিই!!?? কিভাবে যত্ন করি?
ফটোগ্রাফারকে দেখে অামি একই সাথে মুগ্ধ এবং বিস্মিত।অল্পবয়সী তরুণী।অপূর্ব সুন্দরী!ফিল্মস্টারদের মত পোশাক -অাশাক।মাথার উপরে সানগ্লাস, কড়া গোলাপী টিশার্টের সাথে পরনে নেভি-ব্লু জিন্স!
সে ভাংগা ভাংগা বাংলায় বলল,
---অামি কি অাপনাকে কষ্ট দিয়ে ফেললাম!??!
---নো- নো ম্যাম! ইটস মাই প্লেজার!
পাশের ঘর থেকে অামার ছেলেমেয়েরা দরজায়, হুমড়ি খেয়ে পড়ছে প্রায় তাঁকে দেখার জন্য।
--অাপনি তাদেরকে এখানে অাসতে বলতে পারেন।নো প্রবলেম।
--না, না, ঠিকাছে ম্যাম! অাসলে, ওরা এত বিখ্যাত মানুষ দেখেনি কখনো।অাপনাকে দেখে...
----অামাকে, তুমি করে বলুন স্যার।অাই এম অনলি 24! দিলমা হাসলো।
মেয়েটার হাসিটা অামার যেনো পরিচিত মনে হলো।ইতস্তত করে বললাম,
---তোমাকে দেখে কিন্তু ফটোগ্রাফার মনে হয় না।নায়িকাদের মত দেখতে..
দিলমা মন খারাপ করে বললো,
--অামার ওটাই হবার কথা ছিলো, মডেলিং অামি কিছুদিন করেছি।কিন্তু ওটা দিয়ে ক্লিক করতে পারিনি।অামার ছবি তোলার হাত ভালো ছিলো, ছোটবেলা থেকেই।শেষপর্যন্ত এটাই অামাকে রুল করেছে, বলতে পারেন অানউইশড সাকসেসফুল ক্যারিয়ার।
দিলমা একটু জিরিয়ে নিলো, মনে হলো ও যেনো বড্ড ক্লান্ত!
অামি পানির গ্লাসটা এগিয়ে দিলাম।সে নিজের ব্যাগ থেকে ওয়াটার ফ্লাস্ক বের করে লজ্জিতভাবে বলল,
--অামার সিভিয়ার কোল্ড এলার্জি।নরমাল পানি এভয়েড করি..... সরি...
অামি বিনয়ের সাথে তাকে বললাম,
--ইটস অকে...
একটু যেনো নড়েচড়ে বসলো ও..
কণ্ঠস্বর দৃঢ় করে বলল,
---অামার মায়ের নাম, রিদিতা চৌধুরী।লাস্ট ইয়ারে উনি ব্রেন স্ট্রোক করেন।থ্রিমান্থস প্যারালাইজড থেকে গত নাইনথ অগাস্ট মারা যান।
অামার মাথা ঘুরে উঠলো, শরীর থরথর করে কাঁপতে লাগলো, কপাল ঘামছে বোধহয়, চোখ ঝাপসা হয়ে গেলো..
দিলমা যন্ত্রের মত বলতে থাকলো,
--অামার মায়ের কমিটমেন্ট ছিলো, অাপনাকে একটা সুন্দর বাড়ি উপহার দিবেন।বাড়ির কাজ, মা--ই শুরু করান।কিন্তু শেষ করার অাগেই মায়ের অসুস্থতা।তারপর বাড়ির কাজটা অামিই শেষ করি।অামি বাংলাদেশে এসেছি ৪দিন।এরমধ্যে ফিনিশিং টাচ দেয়া শেষ।বাড়িটা রেডী, স্যার!!
অাপনি কি একবার গিয়ে দেখবেন??
অামার হার্টবিট বন্ধ হয়ে এলো যেনো।কান্না থামানো অসম্ভব।এই মেয়ের সামনে কেঁদে ফেলা কি ঠিক হবে?মাথা ঘুরে উঠলো,চোখ অন্ধকার হয়ে এলো!!
অামার জ্ঞান ফিরলো, রাত সাড়ে অাটটার পর,
চোখ খুলে দেখি, সবাই বিছানা ঘিরে বসে অাছে
---দিলমা কোথায়??
---স্যার, অামি এখানে।হঠাৎ ফেইন্ট হয়ে গেলেন, অাপনার কন্ডিশন দেখে ভয় পেয়ে, অামার নিজের পালস বন্ধ হয়ে যাচ্ছিলো প্রায়!
অামি কাঁদতে কাঁদতে বললাম,
--মা,গো.. তুমি কি অামার কাছে এসে বসবে একটু!তোমাকে একটু মন ভরে দেখি......
দিলমা বিছানায় অামার পাশে এসে বসলো,
তাঁর চোখ ছলছল করছে,
---মাগো, অামি দেবদূত দেখিনাই।দেবদূত কেমন হয় জানিনা?? কিন্তু তোমার মা অামার জীবনে দেবদূতের মত এসেছিলো.....অামি
দরিদ্র মানুষ, টিউশনি করে পড়াশোনার খরচ চালিয়ে মেসে দু-বেলা খেতাম।দুপুরে ভাত খাবার পয়সা অামার থাকতোনা।তোমার মা, অামাকে তাঁর বান্ধবীর বাড়িতে টিউশনির বাহানায় প্রচুর টাকার জোগান দিতো।মাঝে মাঝে হাত খরচও দিতো!অামার জীবনে ভালো মন্দ যেটুকু খাবার খেয়েছি, তোমার মায়ের খরচে খেয়েছি।তাঁর জন্য অামি পড়াশোনা করতে পেরেছি।অামার জীবনের স্বচ্ছল সময়টুকুর নাম রিদিতা চৌধুরী।
দিলমা অভিযোগের সুরে বলল,
---মায়ের কি অপরাধ ছিলো যে অাপনি অপেক্ষা করেননি??
---তোমার মা চিঠিতে লিখলো, অাসবার সময় বিরাট সারপ্রাইজ নিয়ে অাসবে।অামি অপেক্ষা করতে থাকলাম,
কিছুদিন পর তোমার নানা অামায় ডেকে পাঠালেন,বললেন, রিদিতা বিয়ে করেছে, মেয়ের মা হয়েছে! ছবিও দেখালেন।
দিলমা ফুঁপিয়ে উঠলো,
----স্যার, অামি যাই!
দিলমা, দরজায় গিয়ে একটু দাঁড়ালো।অন্যদিকে মুখ করে বলল,
----মা-অার অাপনি গোপনে বিয়ে করেন।অাপনি অার মা অাপনার মেসে একান্তে অনেক সময় কাটিয়েছেন।
অাপনাদের সেই একান্ত ভালোবাসায় অামি এসেছিলাম।নিউইয়র্কে যাবার পরই মা, তা টের পান।
অামার ৪বছর বয়সে মা যখন দেশে এলেন, দেখলেন, অাপনি গুছিয়ে সংসার করছেন।মায়ের সারপ্রাইজ টা ছিলাম অামি।অামার ভালো ফটোগ্রাফার হওয়ার জিনটা কিন্তু অাপনার থেকেই পেয়েছি, মায়ের সব সুন্দর ছবিগুলো তো অাপনিই তুলে দিয়েছেন??
একটু দম নিলো দিলমা,তারপর বিড়বিড় করে বললো,
----ম্যানহাটনের বিশাল বাড়িটায় অামার বড় একা লাগে, বাবা।অাপনি কি ওখানে এসে অামার সাথে কিছুদিন থাকবেন??
অামি হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলাম...
দিলমা অার একমুহূর্ত দাঁড়ালো না.....
----সমাপ্ত----
Bạn đang đọc truyện trên: Truyen247.Pro