Chào các bạn! Vì nhiều lý do từ nay Truyen2U chính thức đổi tên là Truyen247.Pro. Mong các bạn tiếp tục ủng hộ truy cập tên miền mới này nhé! Mãi yêu... ♥

৪. কলেজের প্রথম দিন

কলেজের ফিজিক্স ক্লাসে উপস্থিত হল আবীর। ক্লাস অবশ্য এখনো শুরু হয়নি। রুমের মধ্যে সে ছাড়া আর কেউই এখনো আসে নাই।

চারিদিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে মাঝ বরাবর একটা সিটে বসে পড়ল আবীর। রুমটা বেশি বড়ও না আবার ছোট না। কিন্তু ব্লাকবোর্ডের সাইজটা বিশাল। ক্লাসের এই মাথা থেকে একেবারে অপর মাথা পর্যন্ত। সম্ভবত ক্লাসের প্রত্যেক স্টুডেন্ট আলাদা আলাদাভাবে একটা করে উপন্যাস লিখে ফেলতে পারবে।

হোয়াইট বোর্ড ঠিক আছে, চলে, কিন্তু আবীর ব্ল্যাক বোর্ড দুই চোখে দেখতে পারেনা। ব্ল্যাক বোর্ডের উপর লেখার সময় চকের কচকচ শব্দে তার বুক জ্বালা পোড়া করে।

এই বোর্ডটা যদি সাদা কালো কিছু না হয়ে একটা হলোগ্রাফিক বিশাল স্ক্রিন হতো আর স্যারের টেবিলটা হতো বিরাট টাচ স্ক্রিন ডিসপ্লে, তাহলে খুব খারাপ হতনা। স্যার টেবিলে হাত দিয়ে আঁকিবুঁকি করতেন আর তা হলোগ্রাফিক স্ক্রিনে থ্রি-ডি আকারে দেখতে পাওয়া যেত।

কিংবা স্যারের মগজে যদি ইমপ্ল্যান্ট করে একটা অত্যাধুনিক ব্লুটুথ বসিয়ে দেয়া যেত, আর স্টুডেন্টরা এমনই কোনো ডিভাইস দিয়ে সেই ডাটাগুলি গ্রহণ করতে পারতো, তাহলে তো এক মিনিটেই পড়াশোনা শেষ হয়ে যেত। পঁয়তাল্লিশ মিনিট ধরে স্যারের হচড়-পচড় কে শুনে?? খালি স্যারেরা ব্রেইনে ইমপ্ল্যান্ট করতে রাজি হবেন কিনা সেইটাই মূল ব্যাপার। তাদের মকবুল স্যারের মাথায় তো ইমপ্ল্যান্ট করাই যায়, তা না হলে এতো বড় খালি মাথা দিয়ে তার লাভ হল কি?

অথবা যদি গুগোল ক্যাপসুল বানানো যেত, যেটা খেয়ে ফেললে সেটা পেটের ভিতরে গিয়ে আটকে যাবে কোথাও। তারপর যখন যেই তথ্য দরকার হবে সেটা ডাইরেক্ট ব্রেইনে নিউরনের মধ্যে ইস্টিমুলেশন করে পাঠানো হবে। তাহলে পড়াশোনা কয়েক মাইক্রো সেকেন্ডে শেষ করা যেত। যদিও বেশি রিস্কি হয়ে যায় ব্যাপারটা। ভুলভাল জায়গায় স্টিমুলেশন চলে গেলে মাথা আউলা হওয়ার সম্ভাবনা আছে তাদের ফরিদ স্যারের মত।

ফরিদ স্যার 'গোবর নেপা' থেরাপি নামক এক অদ্ভুত থিউরি আবিষ্কার করেছিলেন। তার মতে গাছ অত্যন্ত বুদ্ধিমান একটা প্রজাতি, তাই তার সামনে যাই ঘটুক না কেন, সে সবসময় চুপ করে থাকে। কথা না বলে শুধু চুপ করে কথা শোনাকে তিনি অনেক উপরের লেভেলের বুদ্ধিমত্তার পরিচয় বলে মনে করেন।

যদিও তাতে আবীরের অনেক আপত্তি ছিল। কেউ যদি এখন তার একটা হাত কেটে নিয়ে যেতে চায়, আর বলে এইটা দিয়ে সে অবসর সময় পিট চুলকাবে, তখন তার পিছওয়াড়ায় দুইটা লাগায় না দিয়ে চুপ করে থাকাটা কি খুব বুদ্ধিমানের কাজ হবে? যদিও সে শেষ পর্যন্ত এই যুক্তিটা স্যারকে বলতে পারেনি।

যাই হোক, স্যারের গোবর নেপা থিউরি মোতাবেক সপ্তাহে প্রতি তিনদিন দেড় ঘণ্টা মাথায় গোবর নেপে চোখ বন্ধ করে চুপচাপ বসে থাকলে মাথার ছুলতও উর্বর হবেই, গাছের মত তার মগজও উর্বর হয়ে যাবে। বসে বসে ধ্যানের মত করার সময়, চান্দিতে লাগানো গোবরগুলিকে নাকি তাদের ব্রেইন পুচপুচ করে চুষে খেয়ে নেয়। তিনি এই পরীক্ষা করার সময় নাকি কয়েকবারই এই শব্দ শুনেছেন। স্যারের মুখে এসব তথ্য শুনে আবীররা মুখ চাওয়া চায়ি করত।

রবিন তো একবার বেফাঁস একটা প্রশ্ন করেই ফেলেছিল,
" আচ্ছা স্যার, গাছ কি মাথায় গোবর লাগায়ে বসে থাকে নাকি? গাছে গোবর তো দেয়া হয় গোঁড়ার মধ্যে, আমরা মাথায় মাখবো কেন, তারচেয়ে আমরা একগাদা গোবরে পা ডুবায় দিয়া খাড়ায় থাকি চুপচাপ? "

স্যার সেইদিন তাকে সেই মার মেরেছিলেন, স্যারের থিউরির উপর ওভার থিউরি? তা ছাড়া এটা কোনো প্রশ্ন হল? যদি তখন গাছের মত পা দিয়ে শিকড় গজিয়ে যায়?

তবে স্যারের এই বিখ্যাত আবিষ্কার আবীরদের কাছে প্রকাশ করার তিন মাস পরে তিনি অসুস্থ হয়ে স্কুলেই আসা বন্ধ করে দেন। আর তার দুই মাস পরই তিনি মারা যান। তার থিউরি বিখ্যাত হওয়ার আগেই তিনি পৃথিবী থেকে চলে গেলেন।

তার কি হয়েছিলো জানা যায়নি, তবে মৃত্যুর আগে তিনি নাকি দিনরাত মাথায় গোবর মেখে বসে থাকতেন। তার মতে গাছ শুধু বুদ্ধিমান তা না, তাদের এতো সহজে অসুখ হয়না। হলেও সেই অসুখ তাদের কিছুই করতে পারেনা, গাছ নিজের ত্বকে এক শক্তিশালী ডিফেন্স বলয় তৈরি করে রাখে।

কিন্তু এতো বলয় স্বত্বেও অসুখ তাকে ভালোভাবেই আক্রমণ করল। গোবর নেপা থিউরি কাজে লাগল না। কোনো ডিফেন্সেও কোনো কাজ হলোনা।

গ্রামে কথিত আছে মৃত্যুর সময় নাকি অনেকেই ওনার মাথার চান্দিতে বড় বড় শৈবাল গজানো অবস্থায় দেখেছেন। সেই শৈবালে নাকি ছোট ছোট ফুলও ফুটেছে।
তাদের ক্লাসের সেই রবিন স্যারের মাথা থেকে একটা ফুল তুলে এনে ক্লাসের সবাইকে দেখিয়েছে।

তারপর সেই ফুল তাদের ক্লাসের মিতুকে গিফট দিয়ে দিয়েছে। মিতু ফরিদ স্যারের সবচেয়ে প্রিয় ছাত্রী ছিল বলা চলে। মিতুই স্যারের জন্য সবচেয়ে বেশি কেঁদেছিল, সেটাই হয়ত স্বাভাবিক। সে যখন মরাকান্না কাঁদছিল, তখন তাকে সান্ত্বনা দিতে রবিন কোত্থেকে জানি দৌড়ে এসে মিতুর সামনে গিয়ে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল,

" আর কান্দার কিছু নাই, এই নাও, স্যারের চান্দির ফুল, আমি নিজের হাতে ছিঁড়া আনছি।"

-

-

-

আঁখি জলপাই খেতে খেতে ফিজিক্স ক্লাসে ঢুকল। ক্লাসের মাঝ বরাবর কিসের জানি একটা জটলা। কতগুলো মেয়ে হাউকাউ করছে কোনো কারণে।

কাছে গিয়ে দেখে যা বোঝা গেলো তা হলো, ক্লাসে একেবারে নতুন একটা উটকো ছেলে এসেছে। আর উজবুকের মত মেয়েদের বেঞ্চে বসে ব্লাকবোর্ডের দিকে তাকিয়ে গভীর মনোযোগ দিয়ে কি জানি ভাবছে। চারপাশে এতোগুলি মেয়ের চিল্লানি শুনেও তার কোনো খবর নেই।

আঁখি একেবারে সামনে গিয়ে দাঁড়ালো আবীরের। একটা শক্ত ঝাড়ি দেয়া দরকার। প্রথম দিনেই ঝামেলা শুরু করেছে। কিন্তু ঘটনা হলো উল্টো। সামনে থেকে ছেলেটিকে দেখে একদম আঁতকে উঠলো সে।

একি কাণ্ড! দেবদূতের মত মাত্রাতিরিক্ত সুন্দর একটা ছেলে বসে আছে। তার দিকে যেন তাকিয়ে থাকা যাচ্ছেনা ! যেন ঘোর লেগে যায় চোখে।
অতিরিক্ত সুন্দর ছেলেদের মধ্যে কিছুটা মেয়েলি ভাব থাকে। এই ছেলের ক্ষেত্রে সেরকমটা নেই। সবচেয়ে বড় কথা ছেলেটিকে তার খুব বেশি চেনা মনে হয়, যদিও সে জানে এই ছেলেটিকে আগে কখনোই সে দেখেনি।

আঁখি আরো একটু সামনে এগিয়ে গিয়ে আবীরের কাঁধ ধরে সজোরে ঝাঁকি দিয়ে বলল,

"এই ছেলে! এই হতচ্ছাড়া! এদিকে তাকাও"

আবীরের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। আঁখি আরো জোড়ে ঝাঁকি দিয়ে তার চেয়ে জোড়ে চেঁচিয়ে উঠলো,

" এই যে মহাশয়, কথা কি কানে যাচ্ছেনা? চটকনা খাবা?"

আবীর এই প্রথম মাথা ঘুরিয়ে তাকালো আঁখির দিকে। এখানে কি হয়েছে বা কি হচ্ছে এখনো যেন বুঝতে পারছেনা কিছুই। এখনো সে চিন্তার ভিতর থেকেই বেরুতে পারে নাই।
আঁখি আবার বলে উঠলো,

" তুমি মেয়েদের সিটে বসে আছো কি জন্যে। ছেলেদের সিট চোখে দেখতে পাওনা?"

এবারে আবীর বেশ বিরক্ত হয়ে উঠলো।

" মেয়েদের বেঞ্চে বসলে কি হয়! "

আঁখি ভ্যাবাচেকা খেয়ে ফেলল। ওমা, এইটা আবার কেমন কথা বলল ছেলেটা?

" মেয়েদের বেঞ্চে বসবে কেন, তা ছাড়া এইটা আমার বেঞ্চ! আমি বসবো এখানে। "

" কেন, তুমি গিয়ে ছেলেদের একটা বেঞ্চে বসো। একই তো কথা! "

আঁখি অধৈর্য হয়ে ওঠে,
" না। আমি আমার সিট ছেড়ে কোথাও বসতে পারবোনা। এই সাদিয়া তুই গিয়ে ছেলেদের বেঞ্চে বস। আমি এখানেই বসলাম। নাও চেপে বসো তো এবার একটু। "

সাদিয়া কিছু বলার জন্য যেই মুখ খুলতে যাবে তার আগেই কয়েকটা মেয়ে তাকে কোলে করে তুলে নিয়ে গিয়ে কয়েকটা ছেলের মাঝখানে বসিয়ে দিলো। আবীর তাকিয়ে দেখল সে দৃশ্য। এ কি কাণ্ড!
....

...

ফিজিক্স ক্লাস চলছে। স্যার থিউরি অব রিলেটিভিটি পড়াচ্ছেন। পড়াতে পড়াতে নিজেই বারবার কনফিউজড হয়ে যাচ্ছেন। তবে ছাত্রছাত্রীদের ভিতর কোনো কনফিউশন নেই। তারা বোধহয় সব বুঝে গেছে। কারণ প্রত্যেকে স্যারের দিকে তাকিয়ে জী স্যার, জী স্যার বলে যেভাবে মাথা দোলাচ্ছে তাতে মাথাটাই না আবার সকেট থেকে পকাৎ করে খুলে উড়ে চলে আসে। অবশ্য উদ্দেশ্য একটাই, স্যার যেন ভুলেও তাদের প্রশ্ন করে না বসেন। প্রশ্ন করলেই ধরা।

স্যার পড়া বোঝানো নিয়ে এতো ব্যস্ত ছিলেন যে টেরই পেলেন না যে এদিকে ক্লাসের পঞ্চাশ জন মেয়ের মধ্যে একটি ছেলে মহা সুখে বসে আছে, আর পঞ্চাশ জন ছেলের মাঝে একটি মাত্র মেয়ে লজ্জায় লাল, নীল, বেগুনী হয়ে কেবল এদিক উদিক তাকাচ্ছে।

আবীর অবশ্য তাকিয়ে আছে ছাদের দিকে, একটা টিকটিকির ফড়িং ধরা দেখছে। তাতে আর যাই হোক স্যারের ভুলভাল থিউরি শুনে মাথা খারাপ হওয়া থেকে তো বাঁচা যাবে।

আর আঁখি তাকিয়ে আছে আবীরের দিকে। কি আশ্চর্য ছেলেমানুষিতে ভরা জ্বল জ্বল করা দুটি চোখ। মানুষের বয়স বাড়ার সাথে সাথে তাদের চোখ নির্জীব হয়ে যেতে শুরু করে। সে চোখ বিস্মিত হওয়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। সে চোখ থেকে সহজে আনন্দ, অশ্রু ঝরতে দেখা যায়না। জগতের তামাম জিনিস দেখে সে চোখ কৌতূহলী বোধ করেনা। অদ্ভুত কিছু দেখলেই ভ্রু কুঁচকে ফেলে, যেন সবকিছুতেই সে ভীষণ বিরক্ত।

আঁখি আবীরের ব্যাগ খুলে দেখতে লাগল, কি আছে সেখানে। যেন এই ব্যাগ খুলে দেখার পূর্ণ অধিকার তার আছে। ব্যাগ ঘাটতে ঘাটতে একটা ডায়েরী পেয়ে গেলো সে। মানুষের গোপন ডায়েরী পড়ার আগ্রহ তার সীমাহীন। কয়েক পাতা উল্টিয়ে পড়তে লাগলো কি লিখেছে ডায়েরীতে এই পাগলাটে ছেলেটা.... এর মাঝে আবীর শুধু একবার তাকিয়ে দেখল তার পাশের মেয়েটা তার ব্যাগ খুলে কি জানি একটা বের করে পড়া শুরু করে দিয়েছে। আবীর কিছু না বলে একটু হেসে আবার আগের জায়গায় তাকিয়ে রইল। যদি মেয়েটার দিকে সে আরেকটু ভালো করে তাকিয়ে দেখত, তাহলেই জেনে যেত, যেই অপ্সরীর বর্ণনা আজ সে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দিয়েছিল, তার সাথে এই মেয়েটির কোথাও কোনো বিরোধ নেই।

আঁখি পড়ছে,

"দেখো রথে চেপে

ঐ পথ পাড়ি দেয় দল বণিকের
চলো দেবী হে,
এখনো যে কিছু পথ বাকি আছে ক্ষণিকের"

আঁখি মুগ্ধ হয়ে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল সেই দুটি লাইনের দিকে। কত হাজার শব্দ যে দানা বেঁধে জমে রয়েছে সেই দুটো লাইনের মাঝে, তা আঁখি কিছুতেই বলতে পারেনা।

Bạn đang đọc truyện trên: Truyen247.Pro